কাঁচাগোল্লা নাটোর জেলার এক ধরণের মিষ্টান্ন

 

কাঁচাগোল্লা

নাটোর জেলার এক ধরণের বিখ্যাত মিষ্টান্ন

কাঁচাগোল্লা বা নাটোরের কাঁচাগোল্লা একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন, যা বাংলাদেশের নাটোর জেলার গরুর দুধ থেকে তৈরি কাঁচা ছানা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এর নাম কাঁচাগোল্লা রাখা হয়েছে, কারণ এটি কাঁচা ছানা দিয়ে তৈরি হয়। যদিও এটি মূলত নাটোরে উৎপন্ন হয়, তবে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকেও এই মিষ্টান্নটি পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের কিছু মিষ্টান্ন দোকানেও এটি তৈরি হয়। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট, নাটোরের কাঁচাগোল্লা দেশের ১৭তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কাঁচাগোল্লা তৈরির ইতিহাস 

কাঁচাগোল্লার সৃষ্টির পেছনে একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। জনশ্রুতি অনুসারে, একদিন মিষ্টি তৈরির কাজে তাড়াহুড়োর কারণে নাটোর শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকানে নতুন মিষ্টি তৈরির পরিস্থিতি তৈরি হয়। মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টির দোকান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি যেমন পানতোয়া, চমচম, কালো জাম ইত্যাদি তৈরি করা হতো। দোকানে কাজ করতেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। কিন্তু একদিন হঠাৎ মিষ্টি তৈরির কারিগররা আসেনি। তখন মধুসূদন পালের চিন্তা ছিল, এতসব ছানা নিয়ে কী করা যাবে? এই চিন্তায় তিনি ছানাতে চিনির রস মিশিয়ে গরম করতে বলেন। কিছু সময় পরে যখন তিনি মিষ্টির স্বাদ নেন, তা ছিল অতুলনীয়।

এটি তৈরি করতে কোনও তেল বা ভাজা প্রক্রিয়া না করেই কাঁচা ছানা এবং চিনির রসের সংমিশ্রণে একটি নতুন মিষ্টি সৃষ্টি হয়। রসগোল্লার মতো চিনির রসে ডোবানো হলেও, এটি কাঁচা ছানার রসে তৈরি হয়েছিল, তাই মিষ্টির নাম রাখা হয় কাঁচাগোল্লা। এর স্বাদ রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি সন্দেশকেও ছাড়িয়ে যায় এবং এতে যে কাঁচা ছানার এক বিশেষ মিষ্টি গন্ধ রয়েছে, তা অন্য কোনো মিষ্টিতে পাওয়া যায় না।

এভাবে কাঁচাগোল্লার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, এবং মধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরি হতে শুরু করে। এর সুখ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং দোকানে ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লা প্রস্তুতির খবর।


প্রস্তুত প্রণালী

এটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ: ছানা, মাওয়া, এলাচ গুঁড়ো, চিনি। মাওয়া তৈরি করতে: দুধ, ঘি, পানি।

কাঁচা গোল্লা তৈরির প্রধান প্রক্রিয়া দুটি ধাপে ভাগ করা যায়:

১ম ধাপ: দুধ থেকে ছানা তৈরি করা
প্রথমে, দুধ ও পানি একসাথে মিশিয়ে একটি কড়াইয়ে জ্বাল দিতে হবে। মিশ্রণটি ফুটতে থাকলে, মাঝেমধ্যে নাড়তে হবে। ৫-৬ মিনিট পর ধীরে ধীরে সিরকা যোগ করতে হবে এবং নাড়াতে থাকবে। দুধ জমাট বাঁধলে এবং হালকা নরম হয়ে গেলে সবুজ রঙের পানি আলাদা হয়ে যাবে, তখন পাত্রটি নামিয়ে ফেলতে হবে। এরপর ছানার পানি ঝরানোর জন্য সেটি একটি ঝাঁঝারিতে রাখতে হবে।

২য় ধাপ: ছানা পরিশোধন
পরবর্তী সময়ে, ছানা একটি সিল্কের কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এ সময় কাপড় পেঁচিয়ে চাপ প্রয়োগ করে অতিরিক্ত পানি বের করা যায়। পানি বের করে, ছানাকে একটি কাঠের পাটাতনে রেখে হাতের চাপ প্রয়োগ করে মিহি ছানা তৈরি করতে হবে।

ছানা থেকে কাঁচাগোল্লা তৈরি

প্রথমে, ছানাটিকে তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এরপর দুইভাগ একটি পাত্রে রেখে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিতে হবে। ছানার পানি বেরিয়ে আসলে এবং তা হালকা নরম হয়ে গেলে, মৃদু আঁচে কিছুটা চিনি যোগ করে আবার জ্বাল দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে, চিনি মেশানো ছানা আঠালো হয়ে গেলে, বাকি এক ভাগ ছানা যোগ করে ভালোভাবে নাড়াতে হবে। তারপর ক্রিম এবং এলাচ এর গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে জ্বাল করতে হবে। এরপর, মিশ্রণটি কুসুম-গরম অবস্থায় ভালো করে ছেঁকে ঠান্ডা করতে নিতে হবে। তারপর, এভাবে তৈরি মিশ্রণ এর মিষ্টান্নটিকে কাঁচাগোল্লা হিসেবে বিক্রি করা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

ফ্রিল্যান্সিং কি ? কিভাবে শুরু করবো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার (A to Z)

ঘরে বসে Online থেকে আয় করার ১০টি উপায়